পোশাক খাতের বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের রফতানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ইইউতে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমলেও যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান কার্যালয় ইউরোস্ট্যাট ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে পার্থক্য দেখা গেছে। বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৮ শতাংশ পোশাক রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ রফতানি হয় ইউরোপের দেশগুলোয়।
অটেক্সার তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাইয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি হয়েছিল ৪৫৭ কোটি ডলারের। কিন্তু চলতি বছরের একই সময়ে ৪৭ কোটি ডলার কমে ৪১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৯ শতাংশ বাজার দখলে নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানিকারক দেশ।
অন্যদিকে ইউরোস্ট্যাটের তথ্যে দেখা গেছে, ইউরোপে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাইয়ে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ৫৬৬ কোটি ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১১ কোটি ডলারে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই—এ সাত মাসে বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্য উৎস থেকেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর পোশাক আমদানি কমেছে। এ সময়ে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ কম আমদানি করেছেন ইইউভুক্ত দেশগুলো। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম আমদানি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীন শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৮৭৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে দেশটি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৮০৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে দেশটি। গত বছরের একই সময়ে রফতানি করেছিল ৮২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি বছর ভিয়েতনামের রফতানি কমেছে দেড় শতাংশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং এর জেরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেশে গত জুলাই ও আগস্টে তৈরি পোশাকের উৎপাদন ও রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। চলতি মাসেও সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের জেরেও উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখনো কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে তিন মাস ধরে চলমান ঘটনার কারণে আগামী মৌসুমের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউতে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস নেই। যার কারণে সে দেশের ব্যবসায়ীরা আমাদের তুলনায় যেসব দেশের ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস আছে, সেসব দেশকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ইইউতে আমাদের ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস থাকায় সেখানে এ সমস্যাটা হচ্ছে না। তবে সেখানেও মূল্যস্ফীতির কারণে চাহিদা কমেছে, যার জন্য সেখানেও রফতানি কমেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যে হারে কমছে তার থেকে কম ইইউতে।’