নরেন দাদা চললে কোথায়, হন্ত-দন্ত হয়ে?
তোমায় তো ভাই যায় না দেখা, কাক ডাকা ভোরে!
কি আর বলি ও দাদা ভাই, ঘরে কোন খাবার নাই।
সারা রাত্রি এপাশ-ওপাশ, ভোর বেলাতেই উঠেছি তাই।
তা-যাচ্ছো কোথায়, মিত্তির বাড়ী?
শুনেছিলাম হয়েছে আড়ি,
যতটুকু শোনা কথা, এটা তাদের বাড়াবাড়ি।
ওসব কথা থাকরে দাদা,
মিত্তির বাবু মানুষ সাদা,
শুধু উনার মেজ ছেলে……..
চলিরে ভায়া, বলবো ক্ষণ-সময় পেলে।
আরে ও নরেনদা চাপলে কেন ঠোঁটে?
রটেছিল যেসব কথা তার কিছুও কি বটে?
পায়ে পড়ি ও সোনা ভাই করাসনে আর দেরি,
ঘটনা সে যেটাই ঘটুক দোষটা আমাদেরই।
শুনবি কেন?
তাইলে শোনাই, মন দিয়ে ভাই শোন,
নায্য বিচার পায় না কভু, গরীব মানুষজন।
আস্তাকুঁড়ের খাবার খেয়ে, উঠছে যারা বেড়ে,
বাবুরা সব বড় বনেন, তাদের ঘাড়েই চড়ে।
পা নাড়িয়ে শুয়ে বসে যে খাবারটি খান,
শুনবি নাকি?
সে খাবারটি কোথায় তারা পান?
শোন তাহলে, যাচ্ছি বলে
মোদের শ্রমেই খাদ্য ফলে,
সে খাবারেই বাবুরা আজ, এত বলবান।
সেদিন হঠাৎ মেজবাবু বললে, আমায় ডেকে,
থাকিস কেন দূরে দূরে তুই আামার থেকে?
যা বলবো তাই করবি, নইলে বিপদ ভীষণ
কাল হতে রাখব না আর তোর মত আপদ!
মাথা নেড়ে বললাম, বাবু আপনি আামার গুরু
হুকুম করুন দয়া করে, বুক যে দুরুদুরু।
সিন্দুকটার চাবিটা, বাবা কোথায় যেন রাখে?
চুপিসারে দেখিয়ে দিবি সেই জায়গাটাকে।
বললাম, বাবু পারব না আামি করতে এমন কাজ
নুন খেয়েছি মিত্তির বাবুর সকাল-দুপুর-সাঁঝ।
মুখের উপর কথা বলিস এত্ত সাহস তোর!
জানিস?
চাই যদি তোর জীবনে আসবে না আর ভোর।
কালকে থেকে এই বাড়ীতে আসবি না আর ব্যাটা
আসিস যদি জেনে রাখিস পড়বে মাথা কাটা।
মাথা নেড়ে চলে এলুম মিত্তির বাবুর ঘরে,
খানিক বাদেই চেঁচামেচি বাবুর উচ্চস্বরে।
বাড়ীর সবাই জড়ো হয়ে শুধাইল কারণ
কাল থেকে নরেন ব্যাটার কাজে আসা বারণ।
মিত্তিরবাবু বললে, মেজ কি হয়েছে বল?
নরেণ কোন দোষ করেছে, করেছে কোন ছল?
তবে আর বলছি কি? হয়েছে কি শোনো?
ঘরে আমার যা টাকা ছিল, নাই তার আর কোনো।
নরেন ব্যাটাই সরিয়েছে, সন্দেহটি করে
চুপিসারে ঢুকে গেলাম আমি তার ঘরে
বিছানাটা সরাতেই দেখি-ওইতো আমার টাকা!
একি কান্ড!
যায় কি বলো চুপটি করে থাকা?
মিত্তির বাবু বললে, নরেণ এই কি তোর কাজ?
আসবি না আর কোন দিনও থাকে যদি লাজ।
সেই যে এলুম, যাইনি তো আর ঐ বাড়ীর দিকে
দু-দিন হয় উপোস রেখেছি মা, বউ আর ঝিকে।
মুখের দিকে চেয়ে ওদের থাকতে না আর পারি
যাচ্ছি আবার ও বাড়ীতেই লজ্জা শরম ছাড়ি।
যেয়ো নাগো ও নরেনদা আমার কথা শোনো
কি যে বলি মুখে আমার?
ভাষা নাই আর কোনো
বিনা দোষে নির্দোষীকে এমন অপবাদ
এখন থেকে শুরু হোক তার প্রতিবাদ।
প্রতিবাদ প্রতিরোধে অন্যায় নিপাত যাক
ন্যায়-নীতি আর ভালবাসা শুধু বেঁচে থাক।।