ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা, মিরপুর -১৪, ঠিক মোড় ঘুরে পূর্ব পাশে তাকালেই নৌবাহিনী কলেজ, ঢাকা’র অভিমুখী এর বিলবোর্ড ও আইলন এবং এতদসংলগ্ন নাবিক কলোনি। ধীরপায়ে ছিমছাম রাস্তা ধরে অগ্রসর হলাম। অনতিদূর দেয়ালে সাদা রংয়ের প্রলেপ। সুসজ্জিত কলেজ ইউনিফর্মে শিক্ষার্থীরা কলেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৌতুহলী মন। তাই দেয়ালে নতুন রংয়ের প্রলেপের কথা জানতে চাইলে তারা নিরাসক্ত, কিন্তু প্রফুল্ল নয়ন মেলে জানালো এগুলি দেয়াল চিত্র। তারা আর কথা না বাড়িয়ে দলে দলে কলেজের দিকে এগিয়ে চলছে।
ভেবেছিলাম কি জানি কলোনির মধ্যে কলেজ, আবাসিকের মত হবে হয়তো। অফিস ও আবাসিক ভবনের মধ্যে এমন কিছুই থাকার কথা নয়। কলেজ গেটটা চোখে পড়ল। দেখে মন্দ লাগেনি। রাজকীয় ভাব না থাকলেও মার্জিত ও রুচিশীলতার পরিচয় রয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করতেই ইলেকট্রনিক গেট চোখে পড়ল। নিজের পরিচয় দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হলো। ওয়াক ওয়েটা বেশ ছিমছাম। মাথার ওপরে রঙিন টিনের নির্মাণশৈলী এবং সম্পূর্ণ ওয়াক ওয়ে সিলিং ফ্যানের আওতাভুক্ত। শিক্ষার্থীরা লাইন দিয়ে প্রবেশ করা অবস্থায় বৃষ্টি ও গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার এমন চমৎকার উপায় অন্য কোথাও দেখিনি। চারু ও কারুকলার শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এক ঝাঁক শিক্ষার্থী ধ্যানমগ্ন শিল্পীর মতো নিজেদের ক্যাম্পাসকে তাদের মতো করে সাজিয়ে তুলছে। ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই আমি কলেজটির ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাই।
এক পরিচিত প্রিয় ভাজনের কাছে ক্যাম্পাস সম্পর্কে জানতে চাইলে এক এক করে আমাকে সব জানালেন ও দেখালেন। সুন্দর ও সুসজ্জিত অ্যাসেম্বলি গ্রাউন্ড। যেখানে বড় বড় গাছ চমৎকার বেদীতে আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে। এর পূর্ব পাশে স্কুল ও কলেজ বিল্ডিং এবং শহীদ মিনার যা বায়ান্নর ধারক ও বাহক। পশ্চিম পাশে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। পাশেই অসাধারণ মাঠ। যেখানে কলেজ চলাকালীন সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। বিভিন্ন ফুলের বাগানে কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখানে ছাদ বাগানে নানা ফুল ফলের সমাহার দৃষ্টির তৃপ্তি বিতরণ করছে। নেভি কর্তৃক জিমনেশিয়াম করা হয়েছে যেখানে কলেজের শিক্ষার্থীরা জিম ও ইনডোর গেমস খেলে থাকে।
এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। কাছে গেলাম ও দেখলাম দোতলা বিশিষ্ট এই অডিটোরিয়ামটির নাম শহীদ মোয়াজ্জেম হল।এটি অনেক সুন্দর ও চমৎকার। মূল ভবনে প্রবেশের পথটি ও সুশোভিত। কোথাও কোনো আবর্জনা পরে নেই। ক্যান্টিন থেকে শিক্ষার্থীরা খাবার খেয়ে চমৎকারভাবে সাজানো বর্জ্যধারকে রাখছে। অনন্য সুন্দর গ্রাউন্ডে শিক্ষার্থীদের আনয়নের জন্য বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী নিজস্ব পোশাকে যার যার কাজ করে যাচ্ছেন।
এখানকার অধ্যক্ষ মহোদয় নেভির একজন চৌকস অফিসার। ২ জন ভিপি, ১ জন এডজুটেন্ট, ১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ৩ জন কোঅর্ডিনেটর দ্বারা অধ্যক্ষ মহোদয় সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।বিদ্যুৎ ঘাটতি হলে নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয়। ক্লাসরুমে প্রজেক্টর এর ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষকরা এটির মাধ্যমে যুগোপযোগী শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ক্লাসরুমে স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স বোর্ড সিস্টেম চালু রয়েছে। পড়ানোর মানও অনেক ভালো। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি কলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছ থেকে ব্যাপক সুনাম বয়ে এনেছে।
এখানকার পড়ালেখার ধরন ও রেজাল্ট খুবই ভালো। এখানকার শিক্ষার্থীরা নেভি অফিসার হিসেবে যোগদান করার জন্য সরাসরি আইএসএসবিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে আলাদা লিখিত পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। এই কলেজের সাংস্কৃতিক অঙ্গন অতুলনীয়। ১৪ টি ক্লাবের আওতার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাধ্যমে। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার প্রথম স্থানসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জনে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুনাম রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অর্জনে এ কলেজ বেশ সমৃদ্ধ।
এখানকার অধ্যক্ষের ব্যবহারে মুগ্ধ হলাম। শিক্ষকদের গুণমুগ্ধ কথা ও আচরণে আবেগ আপ্লুত হয়ে তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কলেজ দৃশ্য দেখতে দেখতে ও নিজের কলেজের কথা ভাবতে ভাবতে প্রধান রাস্তায় এসে পড়লে আমাকে এগিয়ে দিতে আসা শিক্ষক বিদায় জানালেন। আমি তার দিকে বিমুগ্ধ নয়নে তাকালে, তিনি স্মিত হাস্যে বললেন আবার আসবেন।