1. chalanbeel.probaho@gmail.com : News :
  2. khokanhaque.du@gmail.com : khokan :
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ০৬:০৬ অপরাহ্ন

ভ্রমন
কানাডার প্রকৃতি ও জীবনাচার

মন্টু ডানিয়েল, ভ্যানকুভার, কানাডা থেকে
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪
  • ২৬৪ বার পঠিত

ইট-পাথরের নগর সভ্যতা ও অতিমাত্রিক ঘনবসতি ছেড়ে বাইরে বিশেষ করে ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও কানাডার মতো বিশাল দেশের প্রকৃতিমাতার কোলে আসতে পারলে বুঝা যায় আমরা জীবন ধারণের ক্ষেত্রে কতোটা প্রতিকূলতার মধ্যে বসবাস করছি। সভ্যতায় যাত্রার নামে কৃত্রিম দূষণ ও মানবিক গুণাবলীর বিপরীতে স্বার্থের আগ্রাসন ও প্রাচুর্যের বাহারী প্রতিযোগিতার তবরখানায় আমাদের পারিপার্শ্বিক,পরিবেশিক ও প্রতিবেশিক অবস্থার যে কতোটা অবনতি করে তুলছি সে অবস্থার যথার্থ অনুধাবন হয় যদি উল্লেখিত দেশ সমূহের দিকে একবার দৃষ্টি দেয়া যায়। এই সব দেশের স্বাভাবিক প্রকৃতি-দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের বাহার, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী-বালুচর, জীবকূল, প্রাণীকূলের অভয়ারণ্য, সভ্যতার পরিকল্পিত স্থাপনা, পরিমিত বসতি, স্বাভাবিক জীবনছন্দ উপভোগের পরিবেশ, নীতি-আদর্শ, সততা ও মানবিকতায় আত্ম-নিবেদন, নিয়ম-শৃঙ্খলায় মনোনিবেশ, দেশ প্রেম, প্রভৃতি গুণাবলি সত্যিই অবাক করার মতো। যেন সবই স্বয়ংক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাহ হচ্ছে। কোন শব্দ নেই, হর্ণ নেই, উচ্চস্বরে কথা নেই, ঝগড়া-বিবাদ নেই, ধর্ষণ-নির্যাতন জবর দখল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-ধর্মঘট প্রভৃতির বালাই নেই, কেউ কারো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না, প্রত্যেকেই যার যার কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিমগ্ন, সামনে পড়লে চেনা-অচেনা নির্বিশেষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছে, রাস্তা পারাপারে পথিককে অগ্রাধিকার দিয়ে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে, ময়লা-আর্বজনা কোথাও ফেলা তো দূরের কথা, অবুজ শিশুরা পর্যন্ত রাস্তায় তথা বাইরে এক টুকরো কাগজ বা আপেলের একটি ক্ষুদ্র বিচিও ফেলে না, ছল-চাতুরী মিথ্যা-ঠকবাজি কাকে বলে যেন জানেই না, প্রত্যেকেই যার যার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে মনোযোগী, কার কি ধর্মীয় বিশ্বাস, নাকি অবিশ্বাসী, পিছনের পরিচয়, শিক্ষা, পেশা, যোগ্যতা, আয়-ব্যয়, বাড়ী-গাড়ি, এই সমস্ত ব্যক্তিগত কোন বিষয়ই প্রশ্ন করেনা, এগুলোকে শিষ্টাচারও মনে করেনা– এ এক অবিশ্বাস্য জীবনাচার, না দেখলে বিশ্বাস করা  অসম্ভব ।

যেন বেদান্ত যুগের সত্য কাহন। বুঝাই যায় না যে, অতীতে এই সমস্ত দেশের বেনিয়া-বণিক ক্ষমতাধর লুটেরা এক সময় দুনিয়াজোড়া দাস ব্যবসা করতো এবং অন্যের রাজ্য দখল করতো। বর্বরতার এমন কিছু অবশিষ্ট ছিলো না যা এরা করতে বাকী রেখেছে। ‘ জোর যার মুল্লুক তার ‘ এই ছিলো এদের জীবনাদর্শ।
শত শত বৎসরের ভোগান্তির শিক্ষায় আজ তারা দুনিয়ায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তারা সাগর সেঁচে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজত্ব করতে যায়নি– নৌকা-জাহাজ তৈরী করেছে, জীবন বাজি রেখে মাসের পর মাস জলে ভেসেছে, ভারতবর্ষসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্য আহরণ করেছে, লুটপাট করেছে কিন্তু
নিজের দেশের পাহাড়-পর্বত, মরুভূমির, বনভূমি প্রভৃতিকে ধ্বংস করতে ওরা প্রবৃত্ত হয়নি। সেই কবে কানাতা থেকে কানাডা হয়েছে তাও তারা বিস্মৃত হয়নি। দখলদার ফ্রান্স অতঃপর ইংরেজদের (উভয়) ভাষাকেই রাষ্ট্রীয় ভাষা রূপে গ্রহণ করেছে। তারা এই সমস্ত এলাকার জীববৈচিত্রকে রক্ষা করে নিজেদের নিরাপত্তাও জোরদার করেছে। প্রসঙ্গহেতু একটি ছোট্ট বিষয় বলি– কানাডার সাগর পাড়ের একটি নিবৃত বনাঞ্চলের মনোমুগ্ধকর স্থানে এক রিসেপশন প্রোগ্রাম চলছিলো, হঠাৎ দু’জন বনরক্ষী এসে মাইকের শব্দ এমনভাবেই কমিয়ে রাখার কথা বললো, যেন উপস্থিত একশত জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। জানতে চাইলে উত্তরে বললো এরকমটিই ওখারনকার আইন, যেন জীববৈচিত্রের শব্দ দূষণ না ঘটে। বিপরীতে আমরা!– আমাদের নিকট শান্ত পরিবেশ মানে যেন শুধু কল্পনার স্বর্গেই স্থিত– জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নয়।

কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ (৩৮.৮ লক্ষ বর্গ মাইল)- যা সবার জানা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত নায়াগ্রা, প্রকৃতির অপার মহিমা-প্রায় ১৬,০০০- বৎসর যাবৎ, সেই বরফযুগ থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলছে। ৪-টি লেক এর উৎসমূলে: ১. লেক সুপিরিয়র ২.লেক মিশিগান ৩. লেক হুরণ ৪. লেক ইরিই– চক্রাকার ঘুরছে, অবশেষে আটলান্টিক মহাসাগর। প্রচুর পরিমাণে বন-জঙ্গল, ঝর্ণা-নদী, সমতলভূমি, বরফঢাকা এলাকাসহ প্রায় ৫.৫ লক্ষ বর্গমাইল মরুভূমিও আছে। অখণ্ড ভারতবর্ষের মতো ফুল-ফলের গাছের সমাহার না থাকলেও বাহারী সবুজের কমতি নেই।

বাংলাদেশের শীতকালের মতো কানাডার গ্রীষ্মকাল, তুষারপাত নেই কিন্তু ঠাণ্ডা আছেই– কাঁথা ছাড়া চলে না। তবে বিশাল দেশ হওয়ায় পৃথিবীর সর্ব রকমের আবহাওয়া এখানে আছে। সময়ের ব্যবধানও একেক প্রান্তে একেক রকম- ১-৬ ঘন্টা পর্যন্ত। শান্ত প্রকৃতির কারণে এখানকার মানুষরাও বেশ নিরুপদ্রব স্বভাবের। বিশ্বশান্তির প্রশ্নে এদের অবদান প্রশংসনীয়। সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্স ও বৃটেনরা পর্যায়ক্রমে কানাডাকে প্রায় তিনশত বৎসর শাসন করলেও আজ থেকে ১৭৫-বৎসর আগে এদেরকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়েছে। বৃটিশের সাম্রাজ্যের সূর্য ডুবলেও ওদের কীর্তির বয়ান কোনদিন বিলুপ্ত হবে না– নদী শুকালেও তার ধারা মুছে না। তাবর তাবর স্বাধীন দেশ বৃটিশের রেখে যাওয়া পথ ধরেই চলছে। বৃটেনের রাণী এখনও কানাডার রাণী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতিতে প্রথম সারিতে থাকায় কানাডার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। শুধু কবে আমরা বিশ্বের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের উপযুক্ত হবো,- আবার আমরা মানুষ হবো সেই পর্বটাই অবশিষ্ট।

লেখকঃ চলনবিলের বিশিষ্ট লেখক, সংগঠক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত