এ বছর বরিশাল বিভাগে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে চাষিরা খুশি হলেও এখনও সম্পূর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারেনি। কৃষি শ্রমিকের সংকট এবং তীব্র তাপপ্রবাহের পর বর্তমানে পুরোদমে চলছে ধান কাটা।
এখন মেঘলা আবহাওয়া ও বৃষ্টির নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছে কৃষক।
অতিরিক্ত পরিচালক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ১২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১ লাখ ৩০ হাজার ১২৪ হেক্টরে উফসী এবং দুই হাজার ৩৯৪ হেক্টরে দেশি জাতের বোরো ধান রোপণ করেছে।
আবাদ হওয়া জমির মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৩২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৫ হাজার ৯৮৬, উফসী জাতের ৭০ হাজার ৫১৩ ও দুই হাজার ৩৩ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান কর্তন করা হয়েছে ভোলা জেলায়, ৭১ শতাংশ। এ জেলায় ৬৬ হাজার ৬৮৪ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
বিভাগের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধান কর্তন করা হয়েছে বরিশাল জেলায়, ৭০ শতাংশ। এ জেলায় ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ২৭৬ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
বরিশাল জেলায় আবাদ করা হাইব্রিড জাতের আবাদ করা ৩০ হাজার ৯৮০ হেক্টরের মধ্যে ২৬ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। উফসী জাতের আবাদ করা ৩০ হাজার ৪৯২ হেক্টরের মধ্যে ১৫৮৫৫ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের আবাদ করা এক হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমির পুরো ধান কর্তন করা হয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আগৈলঝাড়া উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।’
এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকা এবং খালে পানি সরবরাহ থাকায় কৃষকেরা সময়মতো খেতে সেচ দিতে পেরেছেন। আর এ কারণে তাদের ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। কৃষকের আবাদ করা জমির ৮০ ভাগ পাকা ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ ধান চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কাটা সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম ধান কর্তন হয়েছে বরগুনা জেলায়, মাত্র ৩৯ শতাংশ। মোট ১৪ হাজার ৪১ হেক্টরে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
এছাড়া পিরোজপুরে রোপনে অর্ধেক ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এ জেলায় ৩৩ হাজার ৯১০ হেক্টেরে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টরের ধান কর্তন করা হয়েছে।
ঝালককাঠি জেলায় ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টরে আবাদ হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৭৫ হেক্টরের ধান কাটা হয়েছে। শতকরা হার ৪২ ভাগ।
পটুয়াখালী জেলায় ২০ হাজার ৬১০ হেক্টরে আবাদ হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ২৪৪ হেক্টরের ধান কাটা হয়েছে। আবাদের ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে এ জেলায়।
এ বছর বরিশাল বিভাগ থেকে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৭.৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৯২ হাজার ৩৫৩.৪ মেট্রিক টন চাল হাইব্রিড জাতের ধান থেকে, ৩ লাখ ১৩০ মেট্রিক টন উফসী জাত থেকে এবং ৩ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন চাল স্থানীয় জাতের ধান থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।