1. chalanbeel.probaho@gmail.com : News :
  2. khokanhaque.du@gmail.com : khokan :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রাণের বাংলাদেশ এভাবে রক্তাক্ত হতে পারে নাঃ শাকিব খান নোংরা রাজনীতির নামে রক্তপাত বন্ধ হোকঃ চঞ্চল চৌধুরী আমার ভাই-বোনদের ওপর কোনো সহিংসতা দেখতে চাই নাঃ মুশফিকুর রহিম চলছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও ৬ জেলায় বিজিবি মোতায়েন ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে যেসব ড্রাই ফ্রুটস মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধে কটুক্তির প্রতিবাদে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের মানব বন্ধন অনির্দিষ্টকালের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছু কথা

শাহনাজ বেগম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮৩ বার পঠিত

প্রতিযোগিতামূলক উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বর্তমান সরকার প্রণয়ন করেছে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। এর রূপরেখা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত হয়েছে আর বাস্তবায়ন শুরু করেছে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রয়োগের মাধ্যমে। কারিকুলাম প্রণয়ন  সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের গবেষণা পর্যবেক্ষণ সমন্বয় ও বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পদ্ধতিকে অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশে যুগান্তকারী এক নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। সংশ্লিষ্টদের মতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে চলার জন্য প্রচলিত মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে হাতে কলমে শিখনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষা নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে অর্জিত হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলার অভিলক্ষে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়াকে আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে শিখন শিখানোকে সহজীকরণ এবং অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমিয়ে শিখনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মুখস্থ নির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনের অগ্রাধিকার দেয়া এই শিক্ষাব্যবস্তার মূল লক্ষ্য। খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষায় উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেনো ক্লাসের পাঠ ক্লাসেই শেষ করতে পারে, যাতে করে বাড়ির কাজ বা হোমওয়্যার্কের চাপ কমে যায়।

শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষে নির্দিষ্ট সময়ে অর্জিত পারদশির্তার প্রাপ্ত সনদে জীবন-জীবিকার সুযোগ পাবে। যেকোনো দেশের শিক্ষা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য থাকে মূলত ব্যক্তির মানবিক গুণাবলি সুস্থ বিকাশ, যার মধ্যে দিয়ে সে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নে সর্বজনবিদিত দার্শনিক, ঐতিহাসিক, মনোবিজ্ঞান, বাস্তবসম্মতভাবে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলির প্রতি অগ্রাধিকারের  কথা বলা হয়েছে। বিশ্বায়নের এই একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে পৃথিবী প্রবেশ করেছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে।

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বৈশ্বিক নাগরিকত্বের মূল ধারণা, মূল্যবোধ ক্ষেত্র ও যোগ্যতা সন্নিবেশিত হয়েছে। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত বিজ্ঞান মনষ্ক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়নের পর তার ওপর ভিত্তি করে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করে ২০১৩ থেকে নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করা হয়। ২০১২ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে ব্যাপকভাবে। এর ফলে মানুষের চিন্তাধারা, কর্মক্ষেত্র চলাচলে এমনকি খাদ্যাভাসেও এসেছে পরিবর্তন। তাই শিক্ষাক্রম  পরিবর্তন করে পাঠ্যপুস্তক বর্তমান বিশ্বে চলমান বিষয়গুলো সংযোজন করে শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন ও পাঠকে সহজ করে তোলা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১-এ যোগ্যতা বলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গীর  সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কান্ডারি তথা কারিগর হচ্ছে সম্মানিত শিক্ষক সমাজ। তাদের হাত ধরেই বাস্তবায়ন করা হবে এই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। ইতোমধ্যে সরকার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার  শিক্ষকদের ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক সাত দিনের সব ক্যাটাগরির শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন  করেছেন। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এই নতুন শিক্ষাক্রম এর বিভিন্ন নির্দেশনা পরিপূর্ণ অনুসরণ করে শ্রেণি কক্ষে পাঠ দান করবেন। এই পাঠদানকে সফল করার জন্য শিক্ষকদের জন্য রয়েছে শিক্ষক সহায়িকা তথা টিচার্স গাইড (টিজি), যেটি প্রতিদিন পাঠদানের সময় সঙ্গে থাকতে হবে এবং টিজি এর নির্দেশনা মোতাবেক সেশনগুলো ধারাবহিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। তাই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়নে টিজির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

যুগান্তকারী এই শিক্ষাক্রমের সঙ্গে প্রথম দিকে খাপ খাওয়াতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবারই একটু কম বেশি বেগ পেতে হবে, কিন্তু যতো সময় যাবে ততোই আস্তে আস্তে সবকিছু সহজ হয়ে উঠবে। সংক্ষেপে আপনাদের জন্য কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো। নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক নির্দেশিকা সম্পর্কে আপনি জানার ও বোঝার চেষ্টা করুন সাধ্যমতো। প্রয়োজনে শিক্ষা অফিস, বিভিন্ন মিডিয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাহায্য নিতে পারেন।

আপনার সন্তানকে নিয়মিত স্কুলে পাঠান, বর্তমান কারিকুলামে উপস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, উপস্থিত না থাকলে কোনো সেশন মিস করলে পরবর্তী সেশন এর পাঠদান বুঝতে অসুবিধা হবে। তা ছাড়া ৭০ শতাংশ উপস্থিত না থাকলে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন পাবে না।

মনে রাখবেন দামি কোনো শিক্ষা উপকরণ দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট তথা বাড়ির কাজ করা এই শিক্ষাক্রমে নেই।  শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণকালীন সময় বলা হয়েছে উপকরণসমূহ হবে স্বল্প মূল্যের অথবা বিনামূল্যের। তাই আপনার সন্তানকে সারা বছরের জন্য কম দামের কিছু কাগজ, পেন্সিল, রুলার, ছোট ১টি কাঁচি ইত্যাদি প্রতিদিন তার স্কুল ব্যাগে থাকতে সহায়তা করুন। আপনি প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখবেন আপনার সন্তান যেনো স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণ করে।

প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতার সেশনগুলো যাতে আপনার সন্তান মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করে সে ব্যাপারে তাকে তাগিদ দিন। প্রয়োজনে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। আপনার সন্তানের নৈতিক আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখবেন যেনো সে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শ্রেণির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এই ব্যাপারে আপনার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। নতুন শিক্ষাক্রম আচরণিক নির্দেশকের মধ্যে এই বিষয়টি ও রয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক পাঠদান হাতে-কলমে শেখার জন্য যাতে আপনার সন্তান প্রয়োজনীয় পাঠ্য বই এবং শিক্ষকের নির্দেশনা মতে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে আসে। মাঝে মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অথবা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে আপনার সন্তানের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করবেন। বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিডিয়ার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি একজন অভিভাবক হিসেবে আপনারও ভূমিকা রয়েছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম দেখে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাগত জানানোর চেষ্টা করুন।

লেখক: অধ্যক্ষ, কল্যাণপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত