1. chalanbeel.probaho@gmail.com : News :
  2. khokanhaque.du@gmail.com : khokan :
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার প্রথম কণ্ঠ: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

মুহিব আল হাসান
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫
  • ১৭৩ বার পঠিত
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

“স্বাধীনতার ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে এমন কিছু মুহূর্ত, যেগুলো জাতিকে নতুন করে গড়তে সাহায্য করেছে। ১৯৭১ সালের ঘোর অন্ধকারে যখন নেতৃত্বহীন জাতি দিশেহারা, তখনই একটি বজ্রকণ্ঠ ভেসে আসে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে – ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। এই একটি ঘোষণা বদলে দিয়েছিল ইতিহাসের গতিপথ। “মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সংজ্ঞা যদি এক ব্যক্তির নামে সংক্ষেপ করা যায়, তবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিঃসন্দেহে সে নাম। একদিকে তাঁর বজ্রকণ্ঠের স্বাধীনতা ঘোষণা, অন্যদিকে তাঁর দূরদৃষ্টি নির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা – দুইই বদলে দিয়েছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু অস্ত্রের লড়াই নয়, ছিল এক জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে যখন নেতৃত্বহীনতা ও দিশাহীনতার শূন্যতা স্পষ্ট, তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসে এক বজ্রকণ্ঠ – “আমি মেজর জিয়া বলছি”। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি প্রথম শুনে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও কৌশলবিদ। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন ভারসাম্যহীন, তিনি তখন সেনাবাহিনীর ভিতরে ভিতরে সংগঠিত করেন এবং বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠন করেন বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সামরিক ইউনিট – ‘জেড ফোর্স’। এই ফোর্স মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সফলতার নজির গড়ে তোলে। ‘জেড ফোর্স’ গঠনের সময় ভারতীয় পক্ষ অনাগ্রহ দেখালেও জিয়াউর রহমান নিজের নেতৃত্ব ও কৌশলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন। পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও জিয়ার প্রতিরোধকে ঐতিহাসিক ‘স্টালিনগ্রাদ যুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেন।

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ ভাবনা ছিল একেবারে পেশাদারিত্ব নির্ভর। তিনি বুঝেছিলেন, নিয়মিত বাহিনী ছাড়া যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। তাই তিনি পেশাদার বাহিনী গঠনের পথে অগ্রসর হন এবং যুদ্ধের প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দেন সাহসিকতা ও দৃঢ়তায়।

তাঁর এই ভূমিকাই তাঁকে শুধু একজন ঘোষক নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ইতিহাসে স্থান দিয়েছে।

স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য ও সামাজিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে বাংলাদেশ যখন দিশাহীন, তখন শহীদ জিয়াউর রহমান জাতির জন্য নেন দূরদর্শী আর কার্যকর সিদ্ধান্ত। তাঁর মূল দর্শন ছিল “উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি” – এবং সেই ভিত্তিতে তিনি স্থাপন করেন এক নতুন অর্থনৈতিক বাংলাদেশ।

গার্মেন্টস শিল্পে তাঁর অবদান অনন্য। ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যৌথভাবে ‘দেশ গার্মেন্টস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয় তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা, যা আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত।

রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতির সূচনা ঘটে তাঁর হাত ধরেই। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন BMET এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রেরণ করেন হাজার হাজার শ্রমিক।

খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন।

Blue- Economy সম্ভাবনা তিনি প্রথম অনুধাবন করেন এবং সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন।

তাঁর শাসনামলেই দেশের অর্থনীতি বিশ্বমঞ্চে পরিচিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত বলে বিবেচনা করতে শুরু করে।

১৯৭৫ সালে দেশে যখন বাকশাল শাসন ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চরমে, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের জন্য নতুন এক গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা করেন। তিনি ঘোষণা করেন “বহুদলীয় গণতন্ত্র” এবং ১৯৭৬ সালে ‘রাজনৈতিক দল গঠন বিধি’ চালু করে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। তিনি কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, জাতীয় পরিচয়ের স্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশি, বাঙালি নয়” – এই দর্শনের মধ্য দিয়ে জাতি নতুন করে পরিচয় খুঁজে পায়।

তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য ওয়েজ বোর্ড গঠন করেন, প্রেস কাউন্সিল ও প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের বিকাশে বিজ্ঞাপন নীতিমালা সংস্কার করেন। রাজনীতি, গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকার – এই তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান গড়েছিলেন এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।

তিনি শুধু শাসক ছিলেন না, ছিলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা । তাঁর জাতীয়তাবাদ, উন্নয়নকেন্দ্রিক চিন্তা ও গণতান্ত্রিক সংস্কার আজও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তিকে দৃঢ় করে রেখেছে।

লেখক:

গবেষক ও এক্টিভিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত